বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশেই এখন পোষ্যপ্রেমীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পোষ্যদের জন্ম ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতাও। বিশেষ করে কুকুরের প্রসবকালীন প্রস্তুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা কেবলমাত্র মায়ের সুস্থতার জন্যই নয় বরং নবজাতকের নিরাপত্তা ও সঠিক বিকাশের জন্যও জরুরি।
আজকের পোস্টে আমরা দেখবো কিভাবে কুকুরের প্রসবের জন্য নিজেকে ও পরিবেশকে প্রস্তুত করা যায়। প্রসবপূর্ব যত্ন, নিরাপদ স্থান তৈরি, জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সংগ্রহ, পশুচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ, এবং সন্তানের জন্মপরবর্তী যত্নসহ সবকিছু নিয়ে থাকবে এক বিস্তারিত গাইড। এই নির্দেশিকাটি আপনাকে শুধু মানসিকভাবে নয়, বাস্তব দিক থেকেও প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে। পোষ্যদের সুস্থতা এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য এই প্রক্রিয়া অপরিহার্য।
প্রসবের আগের লক্ষণ গুলি চিনে রাখুন
কুকুর যখন প্রসবের কাছাকাছি আসে, তখন তার শরীর ও আচরণে কিছু সুস্পষ্ট পরিবর্তন দেখা যায়। এ লক্ষণগুলো জানলে আপনি বুঝতে পারবেন কখন প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবেন। সাধারণত যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হলো:
- শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে হঠাৎ কমে যাওয়া (৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে)
- খাওয়ার প্রতি অনীহা
- নিজে নিজে গর্ত খুঁড়ে বাসা তৈরি করার প্রবণতা
- অতিরিক্ত লালা ঝরানো বা হঠাৎ কাঁপুনি
- অস্থিরতা বা বিরক্তিভাব
এছাড়া কুকুরের পেটের নড়াচড়া, প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং স্তনের পরিবর্তনও লক্ষণীয়। এসব লক্ষণ একসঙ্গে দেখা দিলে, প্রসব খুব কাছাকাছি বলে ধরে নেওয়া যায়। তখনই প্রস্তুত হওয়ার সময়।
নিরাপদ ও আরামদায়ক প্রসবের স্থান তৈরি করুন
প্রসবের জন্য একটি নিরাপদ, পরিষ্কার এবং আরামদায়ক স্থান তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কুকুরকে এমন একটি জায়গায় রাখতে হবে যেখানে সে নিরাপদ অনুভব করে এবং ভীত নয়। এমন একটি স্থান নির্বাচন করুন যা:
- শব্দ এবং মানুষের চলাফেরা থেকে দূরে
- হালকা আলো এবং হালকা তাপমাত্রা সম্পন্ন
- সহজে পরিষ্কার করা যায়
- কম্বল বা নরম কাপড়ে ঢাকা থাকে
এই স্থানে একটি প্রসব বক্স (whelping box) রাখা ভালো। এতে প্রাচীর থাকবে যাতে বাচ্চারা বাইরে পড়ে না যায়, এবং মাকে একটু ব্যক্তিগত পরিবেশ দেয়। স্থানটি প্রতিদিন পরিষ্কার রাখা এবং জীবাণুমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রয়োজনীয় সামগ্রী তালিকা প্রস্তুত রাখুন
প্রসবের সময় ও তার পরে আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। এগুলো প্রাক-প্রসব এবং প্রসব-পরবর্তী যত্নের জন্য অপরিহার্য:
- জীবাণুমুক্ত তোয়ালে এবং কাপড়
- কাঁচি ও সুতলি (নাড়িভুঁড়ি কাটার জন্য)
- গরম পানির বোতল বা হিটিং প্যাড
- গ্লাভস এবং জীবাণুনাশক
- পশু চিকিৎসকের নম্বর
- পরিষ্কার জায়গা পরিবর্তনের কাপড়
- প্রাথমিক মেডিকেল কিট
এই জিনিসগুলো আগে থেকে গুছিয়ে একটি ব্যাগে রাখুন যাতে সময়মতো খুঁজে পেতে সমস্যা না হয়। এছাড়া, প্রসবকালীন সময়ে একজন সহায়ক বা বন্ধু পাশে থাকলে ভালো।
পশু চিকিৎসকের সঙ্গে আগেই যোগাযোগ করুন
গর্ভবতী কুকুরের জন্য একজন অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রসবের আগে একটি চেকআপ করিয়ে নিন, যেন জানা যায়:
- কতগুলো বাচ্চা হবে (এক্স-রে বা আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে)
- কোনো জটিলতা আছে কি না
- স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব হবে কি না
- মায়ের স্বাস্থ্য কেমন আছে
বিশেষ করে যদি কুকুর প্রথমবার প্রসব করতে যাচ্ছে, তাহলে চিকিৎসকের সাহায্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পশু চিকিৎসক প্রয়োজনে প্রসবের সময় হেল্প করতে পারবেন অথবা প্রসবপ্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
প্রসবের সময় ও পরবর্তী যত্নে করণীয়
প্রসব শুরু হলে কুকুর নিজেই অনেকটা সামলাতে পারে, তবে আপনাকে পাশে থেকে নিরীক্ষণ করতে হবে। যদি প্রসব খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলে (৬ ঘণ্টার বেশি), অথবা রক্তপাত বেশি হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।
প্রসবের পর কিছু বিষয় খেয়াল রাখুন:
- বাচ্চাদের শ্বাস চলছে কি না (নাক পরিষ্কার রাখুন)
- মায়ের গর্ভফুল সব বের হয়েছে কি না
- বাচ্চারা দুধ খাচ্ছে কি না
- প্রসবের স্থান পরিষ্কার রাখা
এই সময়ে মাকে যথেষ্ট বিশ্রাম দিতে হবে এবং উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন খাবার খাওয়াতে হবে। তার স্বাস্থ্যই নবজাতকদের বিকাশে প্রভাব ফেলবে।
প্রয়োজনে সাহায্য নেওয়া ও মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি
সবার আগে মনে রাখতে হবে, এটি একটি আবেগময় ও শারীরিকভাবে জটিল সময়। আপনি যদি আতঙ্কিত হন, তাহলে কুকুরও সেই আবেগ বুঝে ফেলবে। এজন্য মানসিক প্রস্তুতি ও ধৈর্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রয়োজনে পশু হাসপাতাল, অভিজ্ঞ বন্ধু বা কমিউনিটির সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। নিজের উপর ভরসা রাখুন এবং বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিন। প্রস্তুতির মাধ্যমে আপনি ও আপনার পোষ্য উভয়ের জন্য অভিজ্ঞতাটি আনন্দদায়ক করে তুলতে পারেন।
ভেটেরিনারিয়ান অ্যাসোসিয়েশন তালিকা দেখুন
*Capturing unauthorized images is prohibited*